মুফতি তাজুল ইসলাম: ইসলামী শরিয়াহর আলোকে তিন পদ্ধতিতে ব্যভিচার প্রমাণিত হয়। প্রমাণহীন সন্দেহবশত কাউকে ব্যভিচারী বলা বা মনে করা মারাত্মক গুনাহ। নিম্নে ব্যভিচার প্রমাণিত হওয়ার তিন পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো—
১. ব্যভিচারী একবার অথবা চারবার ব্যভিচারের সুস্পষ্ট স্বীকারোক্তি করলে। রাসুল (সা.)-এর যুগে জুহাইনি ও উনাইস (রা.)-এর রজমকৃতা নারী ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি একবারই করেছিল। অন্যদিকে মায়িজ বিন মালিক (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে চার-চারবার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করেছিল। কিন্তু সংখ্যার ব্যাপারে হাদিসটির বর্ণনা মুজতারিব তথা এক কথার নয়। কোনো কোনো বর্ণনায় চার-চারবারের কথা। কোনো কোনো বর্ণনায় তিন-তিনবারের কথা। আবার কোনো কোনো বর্ণনায় দুই-দুইবারের কথাও উল্লেখ আছে।
তবু চার-চারবার স্বীকারোক্তি নেওয়াই সর্বোত্তম। কারণ হতে পারে স্বীকারোক্তিকারী এমন কাজ করেছে, যাতে সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয় না। আর এ কথা সবারই জানা যে ইসলামী দণ্ডবিধি যেকোনো যুক্তিসংগত সন্দেহ কিংবা অজুহাতের কারণে রহিত হয়। যা ওমর, আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) এবং অন্য সাহাবা থেকেও বর্ণিত। তেমনি চার-চারবার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ব্যভিচারীকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে খাঁটি তাওবা করারও সুযোগ দেওয়া হয়। যা একান্তভাবে কাম্য।
তবে স্বীকারোক্তির মধ্যে ব্যভিচারের সুস্পষ্ট উল্লেখ এবং দণ্ডবিধি প্রয়োগ পর্যন্ত স্বীকারোক্তির ওপর স্বীকারকারী অটল থাকতে হবে। অতএব কেউ যদি এর আগেই তার স্বীকারোক্তি পরিহার করে নেয় তাহলে তার কথাই তখন গ্রহণযোগ্য হবে।
#
২. ব্যভিচারের ব্যাপারে চার-চারজন সত্যবাদী পুরুষ এ বলে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দিলে যে তারা সত্যিকারার্থে ব্যভিচারী ব্যক্তির সঙ্গমকর্ম স্বচক্ষে দেখেছে। এ বিষয়ে কোরআনের বক্তব্য এমন : ‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্য থেকে কেউ ব্যভিচার করলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার-চারজন সাক্ষী সংগ্রহ করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৫)
৩. কোনো নারী গর্ভবতী হলে, অথচ তার স্বামী নেই। ওমর (রা.) তাঁর যুগে এমন একটি বিচারে রজম করেছেন। তবে এ প্রমাণ হেতু যেকোনো নারীর ওপর দণ্ডবিধি প্রয়োগ করতেই হবে—ব্যাপারটি এমন নয়। এ জন্য যে গর্ভটি সন্দেহবশত সঙ্গমের কারণেও হতে পারে অথবা ধর্ষণের কারণেও। এমনকি মেয়েটি গভীর নিদ্রায় থাকাবস্থায়ও তার সঙ্গে ওই ব্যভিচারকর্ম সংঘটিত হতে পারে। তাই ওমর (রা.) তাঁর যুগেই শেষোক্ত দুটি অজুহাতে দুজন নারীকে শাস্তি দেননি। তবে কোনো মেয়ে যদি গর্ভবতী হয়, অথচ তার স্বামী নেই এবং সে এমন কোনো যুক্তিসংগত অজুহাতও দেখাচ্ছে না, যার দরুন দণ্ডবিধি রহিত হয় তখন তার ওপর ব্যভিচারের উপযুক্ত দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা যেতে পারে। ওমর (রা.) তাঁর এক দীর্ঘ খুতবায় বলেন, নিশ্চয়ই রজম আল্লাহ তাআলার বিধানে এমন পুরুষ ও নারীর জন্য নির্ধারিত, যারা ব্যভিচার করেছে অথচ তারা বিশুদ্ধ বিবাহের মাধ্যমে ইতিপূর্বে নিজ স্ত্রী অথবা স্বামীর সঙ্গে সম্মুখপথে সঙ্গম করেছে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়ই তখন ছিল প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন; যখন ব্যভিচারের উপযুক্ত সাক্ষী-প্রমাণ মিলে যায় অথবা নারী গর্ভবতী হয়ে যায় অথবা ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচারিণী ব্যভিচারের ব্যাপারে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেয়। (বুখারি, হাদিস : ৬৮২৯; মুসলিম, হাদিস : ১৬৯১)
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।